সিনেমার কবি আন্দ্রেই তারকোভস্কির জন্ম ও বেড়ে ওঠা সোভিয়েত রাশিয়ায়। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন মস্কোর বিখ্যাত গেরাসিমভ ইন্সটিটিউট অব সিনেমাটোগ্রাফিতে। প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আইভানস্চাইল্ডহুড (১৯৬২) দিয়েই তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেয়ে যান। ধীরে ধীরে সিনেমার ইতিহাসেএকজন আধ্যাত্মিক, কাব্যিক পরিচালক হিসেবে নিজের স্থান গড়ে নেন। তার সিনেমায় সোভিয়েতবিরোধী উপাদান আছে-এই অজুহাতে চলচ্চিত্র কর্তৃপক্ষএকসময় তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা শুরু করে। এই দ্বন্দ্বের জেরে তিনি১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগ করে ইতালি চলে যান। সেখানেতিনি তার বন্ধু, কবি ও চিত্রনাট্যকার তোনিনো গুয়েররার সাথে পরবর্তী ছবিনস্টালজিয়ার (১৯৮৩) কাজ শুরু করেন। সেসময় তারা দুজন মিলে একটি প্রামাণ্যচিত্র (ভয়েজ ইন টাইম, ১৯৮৩) নির্মাণ করেন। সেই ছবিতে তোনিনোর প্রশ্নের জবাবে নিচের উপদেশ দেন তারকোভস্কি। আজকাল সবাই সিনেমা বানায়। সবাই ভাবে সিনেমা বানাতে পারবে। ক্যামেরা চালানো বা সম্পাদনা শেখাটা এখন কঠিন কিছু না। তাই আমি তরুণদের ভিন্ন কিছু বলব। তারা যেন যাপিত জীবন থেকে সিনেমাকে আলাদা না করে। কারণ পরিচালক আর অন্য সব শিল্পীর মতোই। একজন চিত্রকর, কবি বা সংগীতশিল্পীর মতোই তার জীবন। এবং যেহেতু তার নিজস্ব সত্তাকে সিনেমায় উজাড় করে দিতে হয়, এটা অদ্ভুত লাগে যে সে কাটায় এক রকম জীবন কিন্তু সিনেমা বানায় ভিন্ন কিছু নিয়ে। অর্থাৎ সিনেমা যেন একটা সাধারণ পেশা, কীভাবে লাভবান হওয়া যায় এই শুধুচিন্তা। এ কারণে ছবি তৈরির সময় আমিনির্মাতাদের, বিশেষ করে তরুণদের আরও বেশি নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল হতেবলব। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, চলচ্চিত্র একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন শিল্প। তোমাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে প্রচুর। তোমাকে হয়ে যেতে হবে ছবির অন্তর্গত , ছবি তোমার অন্তর্গত হবে না। ছবি তোমাকে ব্যবহার করবে, কিন্তু এর উল্টো হবেনা। তাই গুরুত্বপূর্ণ হলো, চলচ্চিত্রের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়া।