মন তরণীর কথা

শ্রাবনী জান্নাত

সিনে কা দাগ হ্যায় ও নালা কি লব তক না গ্যায়া

খাক কা রিযক হ্যায় ও কাতরা কি দরিয়া না হুয়া

 ~~ মির্জা গালিব

যে আর্তনাদ ঠোঁটে এলো না সে বুকে দাগ কেটে বসে

যে জলবিন্দু নদীতে পৌঁছলো না তাকে মাটি শুষে নেয়। 

আমি আজকেও ঘুমানোর চেষ্টা করছি, তবুও লিখছি না। নিজেকে বুঝিয়ে নিচ্ছি, কাল লিখবো। আজ থাক। লিখতে ভয় হয় আমার। আমি নিজেকে এটা বুঝিয়ে পারছি না। এই প্রেক্ষিতে বারেবারে একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খায়। পার্সিয়ান কবি সাদী সিরাজির একটি লেখা। যুদ্ধে ছেলে হারানো এক বাবা ফার্সি ভাষায় এই কথাগুলো এক ইন্টারভিউ তে বলে। আমার কাছে লাগছিলো যে, আমি আজীবনই ফারসিতে দক্ষ, এই ভাষার সমস্ত জোয়ার-ভাটা যেনো আমার পরিচিত সুরের মতন। এই ভাষায় এত করুন দুক্ষ থাকে তা যেনো আমি চিরকাল উপভোগ করে এসেছি। পুড়ে এসেছি।

If I tell you of sorrows in my heart, it will burn my tongue.

If I keep it inside, I’m afraid it’ll burn me from the inside. 

But if I let it out, I am afraid it will burn the whole world.

আমি কি কাল লিখবো বলে এখন বেশি কথা বলে ফেলছি? জীবন টা এত জটিল না হলে আমি বোধহয় আজীবন লিখতাম। ছাই লিখি। তবুও ছাইকেই সাজাতাম প্রতিনিয়ত হরেকরকম করে। আপনার মতোন করে। 

একটা গল্প বলতে মন চায়। একবার এক রাজকন্যা গেলো খেলতে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে। সাধারণ বেশে অন্য মানুষ সেজে। 

রাখাল বালক শুধায়,

 “তোমারে পুছি তুমি আইলে বুঝি বেহেশত ছেড়ে, 

অল্প জ্ঞানে ধারণা করি,

পইড়াছি আমি এবার চিরতরে

হিয়া নাশের ডরে”

রাজকন্যা শুধায়, 

“তুমি কে হইতে পারো,

 এই অবোধ ছোকড়া,

প্রথম দেখায় করিলে স্বীকার প্রণয়,

এ বোধয় চোখের বালি, ভারী অপচয়”

রাখাল বালক এবার কিভাবে বুঝাবে তার প্রণয়ের স্পষ্টতা। সে রাজকন্যাকে বলে তার জীবনের শেষ ইচ্ছে কি, সে তা পূরণ করে নিজের ভালোবাসা প্রমাণ দিবে।

রাখাল জানায়, 

“কইন্যা, আমি হলফ করিয়া বলিতে পারি, 

তুমি ঠিক আকাশ থেইক্যাই আইসাছো,

যাইতে রাজি তেরো নদীর পাড়,

সাত সমুদ্র দূর,

চাও যদি সঞ্জীবনী, 

তাও দিবো আনি,

অথবা এই জীবন, 

তাও দিবো এখুনি।”

রাজকন্যা বলে উঠে, 

“ছোকরা, তুমি জানো বৈ কি আমার নাম, 

আমার ধাম অথবা কর্ম

কি করে শুধাও প্রণয়, 

তুমি কি করে জানিবে এই হিয়ার মর্ম।

কিভাবে পারিবে আনিতে খুঁজিয়া,

আমার সাধের নয়নতারা,

সুখপাখি আমার যে উইড়া গেলো,

সেই সাতটা আসমান গভীরে,

তুমি নিতান্তই, পারিবে কি ফিরায়ে,

আমার সুখপাখি, দিতে আমারে।”

রাখাল দুই হাত মিনতি করে বলে,

“কইন্যা, জানিতে চাইনা নাম তোমার,

জানিতে চাইনা রাশি।

ভিন প্রদেশে যাই গো কইন্যা,

ভিন আকাশে যাই।

সুখপাখি আর আমার হিয়া,

ফিরিলে  এবার,

তোমার হিয়াতেই, কইন্যা, বান্ধা চাই।”

রাজকন্যা রাখালকে জানায়, 

“শ্রাবণ মাসে স্পষ্ট আন্ধার, জংলা নদীর পাড়ে,

আইলো আশ্বিন ফিরতে না হয় দেরি,

যাইবার বেলা বন্ধু শুইন্যা রাখো,

কুইল যদি সুর তুলে,

বেদনার সুর,

খুঁইজো না আমারে,

তুমি বন্ধু রাইখ্যো যতনে,

আমার হিয়া, তোমার হিয়া

আর নয়নতারা, নয়নে “

আমার গল্পটি ফুরালো না। আরেকদিন বাকিটুকুন বলবো। আমি কি অনেক কিছু লিখে ফেলেছি? আমি ত যা বলতে এলাম, কিছুই বলিনি।

লেখকঃ শ্রাবনী জান্নাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।