আরণ্যক

ইমরান হাসান শুভ

ম্যানহাটনের জরাজীর্ণ বিল্ডিংয়ে লুকিয়ে থাকা মানুষটা জানতে পারলো অরণ্য নিউইয়র্ক অবধি এসে পড়েছে। তার গা শিউরে উঠলো, যেন নিজের মৃত্যুকে দেখতে পেল চোখের সামনে। প্রচন্ড আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে মনে করার চেষ্টা করলো যে এসবের শুরু ঠিক কবে আর কীভাবে হয়েছিলো। বছর দুয়েক আগে, যখন অবধি দুনিয়াতে মানুষের রাজত্ব চলতো, ঠিক তখন আমাজনিয়ার গাছেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে এরকম আর চলতে দেয়া যায় না, এবার তারা প্রতিশোধ নেবে সবকিছুর। সেই তখন থেকে শুরু…..

এরপর আমাজন ছাড়িয়ে পুর্বে ব্রাসিলিয়া আর লাতিন আমেরিকার সব শহর এবং তারপর আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ইউরোপ জয় করে দামেস্ক, আলেপ্পো, ইস্তাম্বুল, তেহরান, ঢাকা, দিল্লি, বেইজিং ছাড়িয়ে টোকিও অবধি তারা দখল করে ফেললো।।

বড় বড় শহর গুলো পুড়িয়ে ফেললো সবুজ আগুনে, ঢেকে দিলো সাদা, সোনালী এবং হলুদ নীল ফুলে। শহরের মনুমেন্ট আর পার্লামেন্ট গুলোতে বড় বড় অশ্বত্থ, পাইন, ওক আর শাল গাছেদের আড্ডা এখন। পঁচে যাওয়া মানুষের লাশ থেকে পুষ্টি নিয়ে গাছেদের বাড়বাড়ন্ত; আর পশ্চিমে পুরো আমেরিকা মহাদেশ পেরিয়ে আজ তারা তাদের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ কংক্রিটের জঙ্গল নিউইয়র্ক কে দখল করে ফেললো। লুকিয়ে থাকা মানুষটির শেষ আশাটুকুও ফুরিয়ে যাচ্ছে, সে ভেবেছিলো যে গাছেরা হয়তো কিছু মালি আর বৃক্ষপ্রেমি কে মাফ করে দেবে, তাদের ছেড়ে দেবে; কিন্তু সে জানে না যে যুদ্ধে ক্ষমা করার নিয়ম গাছেরা তাদের সংবিধানে রাখেনি। সে জানে না যে, যখন ঝড় হয় তখন পাগল হয়ে ছুটতে থাকা বাতাস সবকিছুই উড়িয়ে নিয়ে যায়। 

মানুষের আহাজারি গাছেদের মন গলাতে পারেনি। মানুষেরা তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে গাছেদের কাছে প্রান ভিক্ষা চেয়েছিলো; কিন্তু বোকা মানুষেরা জানত না যে গাছেদের কান নেই।

লেখকঃ ইমরান হাসান শুভ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়