মোমেন্টাম 

মুহাম্মাদ শাখাওয়াত হুসাইন ওয়াদুদ

জানলার পাশের সিটে বসেছি আমি। এই বাসের জানলায় গ্রিল লাগানো। অনেক্ষণ ভেবেও বাসের জানলায় গ্রিল লাগানোর কোন কারণ বের করতে পারছি না।

আমার আগে এখানে যে বসেছিলো, সে নাক ঝেড়ে জানলার গ্রিলে মাখিয়ে রেখেছে। একটা গ্রিল থেকে বস্তুটা ঝুলে পড়ে নিচের গ্রিল পর্যন্ত সূতার মতো জড়িয়ে আছে। মাঝখানে ফাঁপা মতো একটা বুদবুদও আছে। সমস্ত বস্তুটা রোদে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেছে। আমি বুদবুদের ভেতর দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করছি। সবকিছু ঘোলাটে লাগছে। বাইরের একটা দালানকে মনে হচ্ছে পানির নিচে ডুবে থাকা একটা জাহাজ।

ইতোমধ্যে আমার পাশের সিটে একজন বসেছে। বাস্তব জীবনে আমার পাশের সিটে সাধারণত কোন মেয়ে বসে না। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে গেলে বাড়িয়ে বলতে হয়। তাই আজ আমার পাশে একজন মেয়ে বসেছে। অন্যদের মতো এই মেয়েটির সাথে আমার প্রেম হবে না। তবুও মেয়েটি আমার পাশে বসলো। মেয়েটি সম্ভবত সুন্দরী। আমার তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না। আমি বুদবুদের ভেতর দিয়ে পৃথিবী দেখায় ব্যস্ত।

বাস চলতে শুরু করেছে। বাইরের গাছপালা কিছু দেখা যাচ্ছে না। বৃত্তবন্দি অস্পষ্ট পৃথিবীটাকে ঘোরগ্রস্ত মনে হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ চারিদিকে। আমার পাশের মেয়েটি নামবে। বাস থামলো। মেয়েটি আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেলো। বাস থেমে আছে। হেল্পার ডেকে চলছে, জিগাতলা-সাইন্সল্যাব-শাহাবাগ। মেয়েটি নেমে ঠিক আমার জানলা বরাবর এসে দাড়ালো। তার চোখে-মুখে অপেক্ষা। ইতি-উতি খুঁজছে কাউকে। হাতে একটি লাগেজ। কাউকে ফোন করার চেষ্টা করছে। সম্ভবত ফোনে পাচ্ছে না। মেয়েটি বিরক্ত। ভয়ার্ত। আমি বৃত্তের ভেতর দিয়ে মেয়েটির মুখ দেখতে পাচ্ছি। তার বিরক্তি আমাকে স্পর্শ করছে না। কিন্তু মেয়েটি ভয় পাচ্ছে কেন? তার অস্পষ্ট মুখে আমি ভয় দেখতে পাচ্ছি। কার আসার কথা ছিলো? সে কি আসেনি? মেয়েটিকে ভয়ার্ত লাগছে কেন?

লেখকঃ মুহাম্মাদ শাখাওয়াত হুসাইন ওয়াদুদ, প্রভাষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি