১.
দরজাহীন উঁচু একটা ঘরে শুয়ে আছে নিশাত। দেয়ালের অনেক ওপরে একটা জানালা, তাতে কোনো গ্রিল নেই, কবাটও নেই। জানালা দিয়ে বাহিরে যা দেখা যাচ্ছে তা সবই বাদামী ধূসর- যেন কেউ সেপিয়া ফিল্টার দিয়েছে। ওটা কি আকাশ? পরমশূন্য এক দৃশ্যপটকে অবাস্তব মনে হল নিশাতের।
হঠাৎ মনে হল পেছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে।
ঘুরে তাকিয়ে দেখে অসম্ভব সুন্দর চেহারার এক পুরুষ। লম্বা, সুগঠিত শরীর। যেন ইটালিয়ান কোনো এক মডেল। না, না, ইটালিয়ান না, ইটালিয়ান মডেলদের এমন দাঁড়ি থাকে না। তাহলে সে কে?
বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে আসল। নিশাতের পেটের বাচ্চাটি কি বের হয়ে এসে পড়ল নাড়ি ছিঁড়ে? বামে তাকিয়ে দেখে চারপাঁচ বয়সী একটি শিশু শুয়ে আছে মেঝেতে। তার মুখের ওপর মাছি ভনভন করছে।
ঘরে এতক্ষণ লুকিতিস ব্র্যান্ডের পারফিউমের গন্ধ ছিল। সেটিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে নাকে পঁচা মাংসের গন্ধ এসে লাগলো।
নিশাতের মনে হলো, শুয়ে থাকা শিশুটি মৃত।
ভয়ে ককিয়ে উঠলো নিশাত। আবার তাকালো সামনে। সবেমাত্র দেখা সুদর্শন পুরুষটি সেখানে নেই। তার বদলে বেঁটে করে উলঙ্গ একটি লোক দাঁড়ানো। তার মুখ থেকে লালা ঝরছে। কুৎসিত হাসি দিয়ে লোকটি ধীরে ধীরে নিশাতের দিকে আগাতে থাকলো। বানরের মত চেহারার লোকটির সারা শরীরে পচন ধরেছে, আর ছোট কোঁকড়ানো লিঙ্গ থেকে ঝরছে পুঁজ।
চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে গেল নিশাত। কারণ, সে আর ওই ভয়াবহ দরজাবিহীন ঘরে আর নেই। নিজেকে আবিষ্কার করল তার নিজের ঘরের খাটে।
তারমানে দুঃস্বপ্ন শেষ।
কিন্তু ডান পাশে খাটের বাহিরের দিকে তার স্বামীর ঘুমানোর কথা। সে কোথায়? মনে হচ্ছে নিশাতের বামে খাটের যে পাশে দেয়াল সেখানে কেউ শুয়ে আছে।
বামে ঘুরতে নিশাতের প্রচন্ড ভয় লাগলো। তবুও বামে ঘুরে সে দেখল একজন শুয়ে আছে। কুৎসিত হাসি নিয়ে নিশাতের মুখ থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে তার চেহারা। পঁচে যাওয়া মাংসপিণ্ড সেখানে। অন্ধকারে দেখতে পাওয়ার কথা না, তবুও নিশাত দেখল সেই চেহারায় কোনো ভ্রু নেই, কামিয়ে দেয়া হয়েছে। তার সারা মুখে লক্ষ লক্ষ কিট কিলবিল করছে।
চিৎকার করে ঘুম ভাঙলো নিশাতের। চিৎকারে তার স্বামী, এমনকি পাশের রুম থেকে তার ননদও ছুটে এল।
নিশাত ঘামে ভিজে গোসল হয়ে গেছে। এসি মধ্যেও গরমে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।
শনির আখড়ার মসজিদ গলির এই বাসায় ওঠার পর এই নিয়ে এক মাসে তিনবার সে দুঃস্বপ্ন দেখল।
বাসাটা সুন্দর। দুটো ইউনিট ভেঙে একটা করা হয়েছে। নতুন রঙ আর ফিটিংস লাগানো নতুন বাসায় নিশাতরা উঠলো ভালো ভেবে।
কিন্তু নিশাতের এই বাসাটা আর ভালো লাগছে না।
গতকাল নতুন বুয়াও বলল বাসাটি ভালো না। বিশাল সমস্যা আছে এখানে। কিন্তু নিশাতের শ্বাশুড়ির ধমক খেয়ে ‘বিশাল সমস্যা’ টি খুলে বলতে পারে নি বুয়া।
বুয়ার বাসাও শনির আখড়ার পাশেই, তাই সে অনেক কিছু জানে এই বাড়িটির বিষয়ে। কাল বুয়া আসলে চুপি চুপি জেনে নিতে হবে ঘটনাটি- ভাবলো নিশাত।
রাত তখন চারটা ছুঁই ছুঁই। নিশাতরা শুয়ে পড়ল। তখনই নিশাত একটি পরিচিত গন্ধ পেল। কিন্তু গন্ধটি ঠিক কিসের- শহরের মেয়ে নিশাত তা ঠাহর করতে পারলো না।
২.
বাথরুমে ঢুকেই পানির কল ছেড়ে দেয়া হল নিচে বালতি না পেতেই।
সকাল সাড়ে আটটায়ও ছাদের নিচের এই ফ্লাটের কলে উষ্ণ পানি । গরম পানি ফুরিয়ে কলে ঠান্ডা পানি আসতেই নীল রঙের শেওলা-পরা বালতি পেতে দিল শাম্মি। সাথে নিজের পরনের আকাশী রঙের বাটিকের জামা, তার নিচের কালো ব্রা খুলে ফেললো সে।
ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছে নগ্ন হয়ে গোসল করতে নাই- মৃদু হেসে প্যান্টি না পরা কালো পাজামা খুলে নিরাভরণ হয়ে গেল শাম্মি, যেন ছোটবেলায় এসব উপদেশ মারানো নানি-দাদিদের মুখে ঝাঁটা মারা হয়ে গেল একচোট।
রাতে সাগরের সাথে যৌনমিলন হয়েছে। তাই নাস্তা খেয়েই সকাল সকাল গোসলে ঢুকলো সে ।
সাগর স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে কাজ করে; মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকতে হয়। তাই রাতে ওসব মিলনের সুযোগ কম। যাও একটু হয়, ভালো ধকল যায় শাম্মির, হাত ব্যথা হয়ে যায় সাগরকে খুশী করতে।
গতকাল রাতে ধকলের কথা ভেবে মরা ইঁদুরের মত গুটিশুটি হয়ে শুয়েই ছিল শাম্মি , কিন্তু সাগরের জোরাজুরিতে পা উঠিয়ে দিতেই হল। তার একমিনিটের মাথায় সাগর নেমে ঘুমিয়ে পরলে শাম্মিও বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
বালতিতে পানি ভরার অপেক্ষায় গতরাতের কথাই ভাবতে আরম্ভ করল শাম্মি।
সাগর এমন কেন! একটা জলজ্যান্ত ৩০ বছরের লোক এত দূর্বল হবে কেন! কত স্বপ্ন ছিল শাম্মির স্বামীকে নিয়ে। অথচ বিয়ের সপ্তাহেই ঢেলে দিয়ে উষানকে পেটে আনলো।
উষান! যার বাবার নাম সাগর, দাদার নাম ছমির আর মায়ের নাম শাম্মি বানু তাদের ছেলের নাম হবে জুয়েল কিংবা রুবেল । ঢং করে নাম রাখা হয়েছে উষান!
হঠাৎ রাগ ওঠা শুরু করে শাম্মির। একই সাথে সে সিদ্ধান্ত নেয়, ফকিরের পুত্র উষানকে আজকে রোজমেরী কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নেয়া হবে না।
বাথরুমের দরজা লক ছিল না, ভিড়ানো ভারী দরজা এমনিতেই লেগে থাকে। পরিষ্কারভাবে কারো হাটার শব্দ শুনে কিছুটা চমকে উঠলো শাম্মি।
উষান কি উঠে গেছে? বাথরুম থেকে ঘাড় বের করে বাহিরে তাকালো সে। বেডরুমের সাথে এটাচড বাথরুম, তাই সহজেই ঘুমন্ত উষানকে দেখা গেল। ফলে আবার বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল শাম্মি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভারী পায়ের হাঁটার শব্দ দরজার ওপাশে।
শনির আখড়ার মসজিদ গলির এই ভাড়া বাসাটা খুবই শতচ্ছিন্ন এবং জর্জর। হয়ত ছাদ ঢালাইয়ে গোঁজামিল ছিল, তাই অন্য তলায় হাটার শব্দকে এত কাছের বলে মনে হচ্ছে।
বাথরুমের যে পাশে দরজা, তার বিপরীত পাশেই বাথরুমের জানালা। জানালার অর্ধখোলা কাঁচে ধুলো আর রাবিশ। যদিও বালতির দিকে তাকিয়ে মগে পানি নিয়ে নগ্ন সুডৌল দেহে পানি ঢালা আরম্ভ করলো শাম্মি, কিন্তু চোখের সর্বডান কোণে তার কাছে মনে হল জানালার বাহির থেকে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হল এমন চোখের দৃষ্টি তার ওপর, যে চোখে কোনো ভ্রু নেই, পাপড়ি নেই, মণি নেই। আছে কেবল প্রাণহীন এক আদিম আতঙ্ক।
গা ছমছম করে উঠলো শাম্মির। ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে জানালার দিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না।
সস্তা সানসিল্ক শ্যাম্পু ব্যবহার করে শাম্মি যার উৎকট সুগন্ধে বাথরুম সবসময় ম-ম করে, নয়তো শাম্মি টের পেত, কর্পুর এবং গোলাপজলের গন্ধে তার বাথরুম ভেসে যাচ্ছে। শাম্মি টের পেত, আদিম সেই অস্তিত্ব ফেরত এসেছে তার কাছে।
শাম্মির উচিত ছিল দৌড়ে বাথরুম থেকে বের হওয়া, জামা পড়া, উষানকে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হওয়া।
সে পারলো না। মগে করে নগ্ন শরীরে পানি ঢালা শুরু করলো শাম্মি।
৩.
গরীব ঘরের মেয়ে শাম্মি। তার বাবা ছিল লাকসাম বাজারের শাড়ির দোকানের কর্মচারী। রেজাল্ট ভালো না হলেও শাম্মির স্বপ্ন ছিল, সে বড় হয়ে চাকরি করবে। পরিবার অতটা রাজি না হলেও আপত্তি করে নি; লাকসামের মেয়েদের অনেকেই অন্তত ভিক্টোরিয়া কলেজ পর্যন্ত যায়। শাম্মিও হয়ত যেত।
আরাফাত ছিল একই গ্রামের ছেলে।বাজারে কম্পিউটারের দোকান ছিল তার। সেই দোকানে ফ্লেক্সিলোড করতে গিয়ে আরাফাতের সাথে শাম্মির পরিচয়। ফ্লেক্সিলোডের খাতা থেকে নাম্বার জোগাড় করে এসএমএস পাঠিয়ে শাম্মির সাথে প্রেম করা শুরু করে আরাফাত। শাম্মি দেখতে ততটা সুন্দর না হলেও তার শরীরের গঠন লোভনীয়।
গ্রামের আরেক ছেলে রবিউল বাইকের তেলের দোকানদার । সেও শাম্মির প্রেমে ছিল মগ্ন, তবে রবিউলের প্রেম যতটা না মনের তার চেয়ে বেশী শরীরের।
আরাফাতেরও কামের তাগিদ কম নয়, কিন্তু সে ছিল ভীতু প্রকৃতির। সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারেও আরাফাত যেখানে শাম্মির গালে চুমু দেবার চেয়ে বেশী কিছু করতে পারে নি, সেখানে রবিউল দুষ্টুমির ছলে শাম্মির স্তনে একাধিকবার হাত দিয়ে ফেলেছে। দশম শ্রেণী পড়ুয়া শাম্মি তখনো পর্নো দেখে যোনীতে আঙ্গুল চালিয়ে মৈথুনের স্বাদ পাওয়া শেখেনি। রবিউলের আঙ্গুলের ছোঁয়াই শাম্মির অর্গাজমের যথেষ্ট কারণ।
ঝামেলা বাঁধে অন্যখানে। আরাফাতের সঙ্গে প্রেমের কথা তাদের সমবয়সীরা জানলেও রবিউলের সাথে সখ্যতা ছিল অনেকটা বিবাহবহির্ভূত পরকীয়ার সামিল। ফলে রাতের বেলা শাম্মিদের বাড়ির পেছনের পুকুরপাড়ে চুপিচুপি উপহার প্রদানই ছিল শাম্মি-রবিউলের গোপন অভিসারের প্রকাশ।
কিন্তু রবিউল পুরোনো খেলোয়াড়। নারীমাংসের স্বাদ এবং তার রন্ধনপ্রণালী রবিউলের মুখস্থ। সেপ্টেম্বরের এক রাতে সে একপিস ইয়াবা সাটিয়ে সেলফি স্ট্যান্ড গিফট দিতে শাম্মির বাড়ির পেছনে গেল।
কথা ছিল, যেহেতু সেলফি স্ট্যান্ড বড়সড় গিফট, তাই সবাই ঘুমালে রাত বারোটার পরে রবিউলকে মিসকল দেবে শাম্মি। রবিউল আসলে প্রসাব করার ভান করে বেরিয়ে আসবে সে৷
কিন্তু শাম্মি যখন পুকুর পাড়ে গেল রাত একটা নাগাদ, তখন সেলফি স্ট্যান্ডের বিনিময় মূল্য হিসাব করতে গিয়ে খানিকটা ভিরমি খেল সে। স্তন যুগল কিংবা যোনিতে হাত বুলিয়ে কিংবা শাম্মিকে দিয়ে লিঙ্গ ধরিয়ে আজ রবিউল সন্তুষ্ট হবে না। সে পকেটে করে প্যানথার নিয়ে এসেছে।
শুরুতে কিছুতে বিদ্রোহ করলেও শরীরে রবিউলের দক্ষ হাতচালনায় নেতিয়ে পরল শাম্মি।রস ছেড়ে নিজেকে সমর্পিত করল রবিউলের কাছে।
শাম্মিকে পুকুরপাড়ের গাঢ় অন্ধকারে পাকুর গাছের নিচে উলঙ্গ করা আরম্ভ করল রবিউল। মূলত, সে চেয়েছিল শাম্মির নগ্ন বুক-পিঠ-নিতম্ব-উরুর ছবি তুলে রাখতে ফোনের ক্যামেরার নাইটমোডে, যেন ফলটিকে না-শুকানো পর্যন্ত রেখে রেখে খাওয়া যায়।
মেঘমুক্ত আকাশের আবছা আলোয় শাম্মির নগ্ন শরীর রেশমের জায়নামাজের মত মসৃণ দেখাচ্ছিল, আশ্বিনের আবছা কুয়াশায় যা আগুনের মত কামনাময়ী হয়ে উঠল।
রবিউল তার নিজের আন্ডারওয়্যার খুলতে গিয়ে বাতাসে মিষ্টি একটা গন্ধ পেল।
গন্ধটা পরিচিত। কোথায় পেয়েছে আগে? গত বছরের বৈশাখে নানার বাড়িতে। কেন পেয়েছে? নানী মারা যাওয়ার পর লাশের কাফনে এই গন্ধ ছিল। কর্পুরের গন্ধ?
রবিউলের পিঠ পেয়ে একটা ঠান্ডা ছোঁয়া নেমে গেল কোমর পর্যন্ত। হঠাৎ ভয় লাগা আরম্ভ হল রবিউলের। এমনকি ইয়াবা খাওয়া উদীয়মান লিঙ্গটাও কেন যেন তার বাবার ছোট্ট কালো নিম্নাঙ্গের মত নেতিয়ে পরল।
রবিউলের মনে হল, পেছনের গাছগুলোর প্রত্যেকটি ডালে একজন করে দন্ডায়মান। এবং সেই ডালগুলো থেকে প্রত্যেকে ভীষণ ক্রোধে তাকিয়ে আছে রবিউলের দিকে, তার ঘাড় বরারব। আশ্বিনের রাত হলেও রবিউলের কপাল বেয়ে নামল ঠান্ডা ঘামের বন্যা।
ততক্ষণে শাম্মির দুটো অর্গাজম ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, ফলে, শুরুর কামোদ্দীপনারও কিছু অবশিষ্ট নেই। তাছাড়া শীতের রাতে ন্যাংটো হয়ে চুপিচুপি শুয়ে থাকতেও ভালো লাগছিল না। এমন অবস্থায় রবিউলের নেতিয়ে পরা দেখে বিরক্তিতে শরীর জ্বলে উঠলো শাম্মির। না ঢুকিয়েই শেষ হয়ে গেল রবিউইল্ল্যা? কতবার না একঘন্টার মিলনের গল্প করলো? সাত ইঞ্চি লিঙ্গের গল্প করল? ফাঁপর ফাঁস হয়ে গেল একেবারে।
গজগজ করতে করতে শাম্মি কাপড় পড়ে নিয়ে বাড়ির দিকে এগুলো। রবিউল বাঁধা দিল না, বরং কাঁপতে কাঁপতে মন্ত্রমুগ্ধের মত বাজারের দিকে গেল।
পরদিন সকালে শাম্মি সিদ্ধান্ত নিল, রবিউলের সাথে সে আর কখনো কথা বলবে না। সেদিন দুপুরে পুকুরপাড়ের পিড়িতে বসে সে ফোন থেকে রবিউলের নাম্বার ব্লক করল। সেদিন শাম্মি এতটাই মগ্ন ছিল ফোনে যে পুকুরের ওইপাড় থেকে পুরোনো ইটের ঢিবির পাশ থেকে মৃত মানুষের মত একজোড়া ভ্রু-পালকহীন কালো চোখ লোভাতুর দৃষ্টিতে শাম্মির দিকে তাকিয়ে আছে সে খেয়ালই করল না ।
৪.
সেই রাতে, অর্থাৎ রবিউলের ব্যর্থ অভিসারের পরেরদিন রাতে ভাইয়ের ঘরে একাই শুয়েছিল শাম্মি। তার বড়ভাই সেদিন শ্বশুরবাড়ি গিয়েছে বেড়াতে। ফলে, বোনদের সাথে রুম শেয়ার করা থেকে রেহাই পেয়েছিল সে । হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানো যাবে- ভেবেছিল শাম্মি। সে শুয়ে পড়ল এগারোটার দিকে।
ঘুমের একটা পর্যায়ে শাম্মি নিজেকে অচেনা একটা ঘরে আবিষ্কার করল। ঘরটি বেশ অদ্ভুত। দেখে মনে হচ্ছে পাথর দিয়ে তৈরি, কিন্তু বেশ চকচকে। আশ্চর্যজনকভাবে সে খেয়াল করল, ঘরের সিলিং অনেক উঁচুতে এবং তারচেয়ে আজব বিষয়, ঘরে কোনো দরজা নেই। কিন্তু ঘরের চারটি পাশেই উঁচু উঁচু খোলা জানালা।
হঠাৎ ঘরটি আতরের গন্ধে ম-ম করতে শুরু করলো। কিন্তু তাতে ঘাবড়াবার মত মানসিক অবস্থায় ছিল না শাম্মি।
কিন্তু যখন স্পষ্টভাবে মাথার পেছনের জানালায় কারো ছায়া দেখা গেল, শাম্মি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।
জানালার বাহিরে যে মানুষটিকে দেখতে পেল শাম্মি, তার সৌন্দর্যে যেন তার পুরো ঘর স্ফুটিত হয়ে গেল। শাম্মি আলোর ঝলকে নিচের চৈতন্য হারালো, শুধু বুঝলো এরকম সুন্দর মানুষ সে আগে কখনো দেখে নি।
পরদিন সকালে উঠে সে বুঝল, গতরাতে সে কেবলই স্বপ দেখেছে। কিন্তু অন্যান্য স্বপ্নের মত সেই স্মৃতি বিলীন হল না। কেমন একটি অদম্য আগ্রহ কাজ করা শুরু করল শাম্মির ভেতরে। এমনকি আগের দিনের নেতানো রবিউলের ঘটনাটিকেও কয়েক আলোকবর্ষ দূরের একটা ঘটনারেখার চেয়ে বেশী কিছু মনে হল না।
সেই রাতে শোবার পর আবার আসলো ওই নায়কের মত সুন্দর মানুষটি। তবে এবার অদ্ভুত ঘরটিতে না, শাম্মির নিজের ঘরে।
জানালো, সে পুকুরপাড়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে শাম্মিকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলেছে। জানালো শাম্মির ঢেউ খেলানো দেহ আর উদ্ধত, উঁচু কিন্তু অস্থূল স্তনযুগল দেখে সে শাম্মির প্রেমে পরে গেছে। আরো জানালো, শাম্মির মোহে সে কয়েকশ প্রাচীন আইন ভেঙ্গে শাম্মির বাড়িতে এসেছে, শাম্মির সাথে কথা বলছে । শাম্মি কি তার প্রেম গ্রহন করবে?
শাম্মি কিছু বললো না। কিন্তু সেই অসম্ভব সুন্দর পুরুষটি যখন শাম্মির পায়জামা খোলা শুরু করলো, তখনও শাম্মি বাঁধা দিল না কিংবা বাঁধা দিতে পারলো না।
তারপরের সময়টা, কতটুকু সময় ছিল শাম্মি জানে না কারণ স্বপ্নে সময়ের ধারণা থাকো না, শাম্মির জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহুর্তের একটি।
তার ভাবী সহ সকল মেয়ের মুখেই সে এতদিন শুনে এসেছে সঙ্গম মানেই ব্যাথা, সেই ধারণ চুরমার করে দিল এসব আদর।
সেই রাতে শাম্মির মনে হচ্ছিল সে লাগাতার অর্গাজমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, যেই সুখের জন্য আঙ্গুল দিয়ে ঘষা কিংবা স্তনে স্পর্শ করার দরকার হয় নি৷
পরদিন সকালে অসম্ভব সুখ নিয়ে ঘুম ভেঙেছিল শাম্মির। কোমরে সুখের ব্যাথা, স্তনে সোহাগের দাগ। যোনিতে ব্যাথার জন্য সে ঠিকভাবে হাঁটতেও পারছিল না, কিন্তু শাম্মির আত্মা ছিল সন্তুষ্ট।
এভাবে পুরো বছরটা চলল।
প্রতিদিন সকালে আঠালো ভেজা পায়জামায় জেগে ওঠাটা শাম্মির রুটিনে পরিনত হল। শাম্মি পরিষ্কারভাবে বুঝলো তার রসের নাগরটি কোনো মানুষ না, তার সঙ্গে যা হচ্ছে তাও জাগতিক কিছু না, কিন্তু, নিজের শরীরে হাত দিয়ে হস্তমৌথুনে কিংবা রবিউলের সাড়ে চার ইঞ্চির লিঙ্গের ব্যবহারে শাম্মির একটা বোঝাপড়া হয়েছে জাগতিক যৌনতার বিষয়ে। সেই বোঝাপড়ায় সে বুঝে গেছে, সুন্দর পুরুষটির সঙ্গমের কোনো পার্থিব বিকল্প নেই এবং এই সঙ্গমের নেশা সে সহসা কাটাতে পারবে না। ।
এমন সুখের উপহারে শাম্মি কৃতজ্ঞতায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিল। রাতের জন্য সে সবসময় নিজেকে গুছিয়ে রাখতো। পরিষ্কার রাখতো। চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক এবং ফোমের ব্রা পরে স্তনদুটো উঁচু করে ঘুমাতে যেত শাম্মি । আরাফাত সহ সকল বান্ধা কিংবা খুচরো প্রেমিকের সঙ্গ ত্যাগ করল সে।
কিন্তু এই সুখ চিরস্থায়ী হল না। অঞ্চল ভিত্তিক আইন ভঙ্গের দায়ে রাতে আসা যাওয়া করা এই পুরুষকে কিছু অস্তিত্ব্কঅবাধ চলাফেরায় বাঁধা দিল। শাম্মিদের ঘরের ভেতরেও একটি অস্তিত্বের বাস ছিল। সেটিও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ করল। সুন্দর পুরুষটি যেই গোত্রের, তারা চিরকালই মানুষের ঘরে থেকেছে। তাই সীমা অতিক্রমের বিষয়ে তাদের শক্ত অবস্থান থাকে সবসময়।
বন্দী করা হল ওকে।
হঠাৎ একদিন শাম্মি দেখল, এক সপ্তাহ হয়ে গেছে সে আদর পাচ্ছে না। সপ্তাহ হয়ে গেল মাস, মাস হয়ে গেল বছর। সে আর আসল না।
শাম্মি কৃষ্ণবিয়োগে পাগলের মত হয়ে গেল। নাওয়া-খাওয়া,সাজগোজ, পড়াশোনা- সবই ছেড়ে দিল।
মেয়ের এই অবস্থা দেখে প্রমাদ গুনল শাম্মির বাবা-মা। মেয়ের বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল। বিয়ে ঠিক হল পাশের গ্রামের সাগরের সাথে। বিএ পাশ ছেলে, ঢাকায় চাকরি করে।
বাসরের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত শাম্মি ভেবেছে, এই বুঝি সে আসবে আর বিয়েটা ভেঙ্গে দেবে ৷ কিন্তু না, সে আসলো না।
বাসরের রাতে শাম্মির মনে ভয় ছিল অনেকগুলো। শাম্মি ভার্জিন না, এমনকি তার আশেপাশেও না। সাগর কি সেটা বুঝে ফেলবে?
পর্নোগ্রাফি আসক্ত, ভিগোরেক্স খাওয়া দূর্বল চার ইঞ্চির লিঙ্গের সত্ত্বাধিকারী সাগরের পক্ষে সতীত্ব ঠাহর করা সম্ভব হয় নি। তার ওপর শাম্মি বাথরুমে গিয়ে ব্লেড দিয়ে কেটে যখন কিছুটা রক্তের চিহ্ন দেখাতে সক্ষমও হল, সাগরের সন্দেহের অবকাশ থাকলো না কোনো৷
সেই থেকে চলছে সাগর-শাম্মির বিবাহিত জীবন৷ দিনভর শাম্মির ঘরকন্না, আর রাতে তীব্র যৌন অপ্রাপ্তি।
তার ওপর উটকো যন্ত্রণা এই উষান! এত বিশ্রী চেহারার ছেলে বাচ্চা সে আগে দেখে নি। এই বানর এবং বানরের বাবা রাতে যখন ঘুমায় তখন নিজের জীবন এবং জীবনের শূন্যতার কথা ভেবে কষ্টে শাম্মির চোখে পানি চলে আসে।
আজকে সকালেও সেভাবেই মন উদাস করে ঘুমন্ত উষানের পাশে শুয়ে ছিল শাম্মি। সাগর অফিসে যাওয়ার পর শনির আখড়ার বাসাটার বাথরুমেও গোসলে ঢুকলো সে। কিন্তু, হঠাৎ পুরোনো কথা মনে পড়ছে কেন? ভয় ভয় লাগা সত্ত্বেও বাথরুম থেকে বাহিরে যেতে পারছে না কেন?
বাথরুমের লাইট বন্ধ হয়ে গেল। শনির আখড়ার মসজিদ গলির বাসাটি দিনের বেলায়ও অন্ধকার।
বালতির পানির দিকে তাকালো শাম্মি। আবছা আলোতে বালতির পানিতে নিজের ছায়া দেখলো সে। আর দেখলো তার পেছনেই কিছু একটা দাড়িয়ে আছে। যার চোখে ভ্রু নেই, চোখের পাতা নেই। মুখে শয়তানের হাসি।
৫.
বৃষ্টির দিনে সাগরের মত মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের হয় মহাবিপদ। বাইকে চড়লে পাতলা বৃষ্টিও শাওয়ার দিয়ে যায়। আবার হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়ানোর মত ছাউনি পাওয়া হয় মুস্কিল। কিন্তু এই মাসে বিশাল টার্গেট, ভাবলো সাগর।
“টার্গেটের গুষ্টি চুদি। স্কয়ারের গুষ্টি চুদি। শরিফ মাদারচুতের গুষ্টি চুদি”- এভাবে সুপারভাইজার শরিফ বা তার ম্যানেজার ইকবালের পুরো কওমের সাথে যৌনক্রিয়ার কথা বলতে বলতে সিগারেট ধরায় সাগর। বাসায় সিগারেট ধরালেই শাম্মি ঘ্যানরঘ্যানর শুরু করে। তাই সিগারেট ধরাতেই শাম্মির কথা মনে পরে যায় সাগরের। মাগিটার হঠাৎ কি হল?
সবই ঠিকঠাক চলছিল। সে হঠাৎ একদিন লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় গিয়ে দেখে কলিংবেলে শাম্মি গেট খুলছে না। একসময় বাড়িওলাকে ডেকে লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে শাম্মি উলঙ্গ হয়ে বাথরুমে পরে আছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বাথরুমের মেঝে।
হয়ত শাম্মি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গিয়েছিল, ভেবেছে সাগর। কিন্তু তার পর থেকেই শাম্মির আচরণে বিশাল অসংলগ্নতা।
সে ঠিকমত খায় না। গোসল করে না। যে শাম্মি সঙ্গমের জন্য মুখিয়ে থাকতো , সে সাগরকে গায়ে ছুঁতে পর্যন্ত দেয় না। জোর করতে গেলেই বলে, তার মাসিক চলছে।
মাঝেমাঝে রাতে বাসায় ফিরে সাগর পারফিউমের গন্ধ পায়।
গতরাতে শাম্মির জামার ভেতরে জোর করে হাত ঢুকিয়ে দেখেছে তার গায়ে টাটকা আর আঁচড় কামড়ের দাগ।
দুয়ে দুয়ে চার মেলায় সাগর।
খানকিমাগি নির্ঘাত নতুন নাগর জোগাড় করেছে। নির্ঘাত কোনো পুরুষ সাগরের অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢুকে শাম্মিকে পাল দেয় ।
ক্রোধে গা জ্বলে ওঠে সাগরের।
এইতো আজকে সকালে বের হবার সময় লাইসেন্সের কাগজ নিতে ভু্লে গিয়েছিল সে। রাস্তায় নেমেও আবার ঘরে ফিরে আসতে হয় সাগরকে। এসে দেখে, শাম্মি চোখে কাজল দিচ্ছে।
তার মানে আজকে অসময়ে ঘরে গেলে দুটোকেই পাওয়া যাবে। হাতেনাতে ধরা হবে রাধা-কৃষ্ণকে। তবে প্রমাণ রাখতে হবে। ফেসবুকে পুরুষদের অধিকার রক্ষায় তৈরী করা গ্রুপ মারফত সে জেনেছে, পরকীয়া করলে তালাক দিতে কোনো ঝামেলা হয় না।
মাতুয়াইল মেডিকেলের সামনে থেকে ডিউটি ফেলে বাইকে স্টার্ট দিল সাগর। রাগে ও যন্ত্রণায়।
৬.
আজকে দ্রুতই শাম্মির কাছে চলে আসল সুদর্শন পুরুষটি।
উষানকে রিভোট্রিল গুলে খাইয়ে আর নিজে স্তনে গোলাপজল মেখে শুয়ে পড়ল শাম্মি। তবে সে সহসাই সঙ্গম শুরু করল না।
“কি হইছে আপনের? লাগাইতাছেন না কেনো?”
শাম্মিকে মনে করিয়ে দেয়া হল আরেকবার যে সে শাম্মির কাছে কি চায়।
“এইটা কি কইলেই হয় নাকি?আমারে কই নিয়া রাখবেন কেমনে রাখবেন ওইটা আমার বুঝে আসে না। এমনে থাকলেই তো চলতাছে। অগোরে ছাড়নের দরকার কি?”
বিরক্ত হয় শাম্মি। তাদের লাকসামের বাসার বুড়ো জ্বিনটাকে হত্যা করে পালিয়ে এসেছে সে ৷ সেই সঙ্গে তাকে গোত্র বদলাতে হয়েছে, নতুন গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়েছে। তাই বলে এমন অন্যায় আবদার করা যায় না । এত সহজেই সাগরকে হত্যার অনুমতি দেয়া যায় না। তাছাড়া উষানকে নিয়ে আয়নার পেছনে কিভাবে যাবে সেটাও পরিষ্কার না।
কিন্তু খুব শীতলভাবে সে জানায়, তারা তিনজন একসাথেই থাকবে, ভয়ের কিছু নেই।
কিন্তু সেই শীতলতায় অন্য কিছু ছিল যা শুনে শাম্মির শরীরে কাটা দেয়।
“এমন করতাছেন কেন! আমারে খাইতাছেন ভালো লাগতাছে না? উষান আর সাগইর্যারেও খাওন লাগবো?”
জবাবের অপেক্ষায় ছিল শাম্মি। কিন্তু হঠাৎ গেটের লক ভাঙ্গার শব্দে সচকিত হয়ে যায় সে।
গেট খুলে প্রবেশ করে সাগর। তারপর দরাম করে গেট লাগিয়ে তাকায় শাম্মির দিকে।
উলঙ্গ দেহের শাম্মিকে দেখে সে নিশ্চিত হয় ঘরে পরপুরুষের উপস্থিতি।
খোঁজা শুরু করে সে পুরো ঘরে। খাটের নিচ থেকে বাথরুম পর্যন্ত কাউকে না দেখে সাগর হিসহিস করে বলে,
“ভাতাররে কই লুকাইছোস। ব্যাডাখাওয়া উমাইন্না মাগি, ভাতাররে কই লুকাইছোস?”
শাম্মি চোখের সামনে সুন্দর পুরুষটিকে রূপ বদলাতে দেখে, খুনের ছায়া দেখে। এত সুন্দর একটা পুরুষকে হঠাৎ পিশাচ হয়ে যেতে দেখে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তার মুখে ফেনা চলে আসে। সাগর চিৎকার করে বলে-
“রঙ্গ চোদাইবিনা কইলাম। জানে মাইরালামু।”
ঠিক তখন এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য সাগরের মনে হয় তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে ঘুরতেই মনে হল কালো কিছু একটা খাটের নিচে ঢুকে গেল।
বুকের মধ্যে ধ্বক করে লাগে সাগরের। খাটের নিচে দেখতে হবে। আনন্দিত হবার বিষয়, অবশেষে বেশ্যার পুত্রকে হাতেনাতে ধরা যাবে। কিন্তু এত ছোট কাজে এতটা ভয় লাগছে কেন? জীবনের সকল সাহস সঞ্চয় করে নিচু হয়ে খাটের নিচে তাকালো সাগর।
কিছু নেই সেখানে। শুধু একরাশ অন্ধকার। সাগর তাকিয়ে থাকলো সেদিকে।
মনে হল অন্ধকারটি গতিশীল। মনে হল অন্ধকারটি সাগরের হিংস্র স্রোতের মত সাগরের দিকে তেড়েফুঁড়ে আসছে। সাগর চোখ সরাতে পারলো না খাটের নিচ থেকে। সেই অন্ধকার ধীরে ধীরে অবয়ব ধারণ করা শুরু করল। লোমশ বিশ্রী কুকুরের মত কুন্ডুলি পাকাতে আরম্ভ করলো। সাগরের পিপাসায় বুক ফেটে যাচ্ছে, দোয়াদরুদ মনে করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, ভয়ে শরীর প্যারালাইড হয়ে যাচ্ছে।
কর্পুরের গন্ধের আগমন ঘটল সহসাই । একই সাথে ভয়াবহ কালো ছায়ার জন্তুটির একটি চোখ দেখা গেল। সাদা গোলকে মণিহীন, ভ্র-পাপড়িহীন কালো চোখ। আর গলার ভেতরে থেকে আসছে গগগগগগ শব্দ।
মৃত্যুর আগে সাগরের মধু আইসক্রিমের কথা মনে পড়েছিল। স্কুলে থাকাকালীন খেতে চেয়েছিল সাগর। পয়সার অভাবে কখনো খাওয়া হয় নি।
৭.
এডভান্সের টাকা গচ্চা দিয়েই শনির আখড়ার বাসাটি ছেড়ে দিল নিশাতরা। যেই বাসায় এক মহিলা তার স্বামীকে ঘাড় মটকিয়ে আর সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছে, সেখানে আর যাই হোক থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া বুয়া আরো বলেছে, পরবর্তীতে এই বাসায় অনেকে ভাড়া উঠলেও কেউই টিকতে পারে নি৷ পরবর্তীতে বাড়িওলা পুরো ফ্ল্যাটটিকে রেনোভেট করে। নিশাতরা ওঠে।
বাসা ছাড়ার পর নিশাতরা আরেকটু পেছনে এগিয়ে চিটাগাং রোড চলে আসল। মাদানিনগরের একটি চার বেডরুমের বিশাল বাসায় উঠল তারা। নিশাতদের রুমে এটাচড বাথরুম না থাকলেও নিশাত আপত্তি করলো না কারণ বাসাটি খোলামেলা। ভালোই লাগলো নিশাতের। অজানা কারণে দুঃস্বপ্ন দেখাটাও বন্ধ হল তার।এবং কয়েকমাস পরেই নিশাতের ঘরে এল ফুটফুটে এক মেয়ে সন্তান। তাকে নিয়েই জীবন বয়ে যেতে শুরু করল।
দুই বছর পরের এক জুলাইয়ের রাত। নিশাত ততটা ধর্মকর্মে মনযোগী না হলেও কিছু মৌলিক রীতির মেনে চলে কঠোরভাবে। যেমন- সঙ্গমের পর পর গোসল করে ফেলা।
সেদিন রাতে নিশাতদের বাসায় মেহমান ছিল; ভাশুর এবং তার পরিবার। ডাইনিং বড় বিছানা পেতে শুলো অনেকজন।
রাতে ঘুমানোর সময় নিশাতের স্বামী কিছুটা চঞ্চল হয়ে উঠলে নিশাত বাঁধা দিতে গিয়েও দিলো না। বাবু হবার পরে তাদের ঘনিষ্ঠ হবার দিনগুলো কমে এসেছে।
মিলনের পর নিশাত পড়ল মহাবিপদে। এত রাতে বাড়ির লোকদের ডিঙ্গিয়ে গোসল করাটা খুব লজ্জার বিষয় হবে। আবার সারা রাত অপবিত্র হয়ে ঘুমানোটাও সমীচীন হচ্ছে না।
কিন্তু কি আর করার! আলগোছে শুয়ে পড়ল নিশাত। চুল খুলে, শ্যাওলা রঙের সেমিজ পড়ে।
একটা সময়ে ঘুমের ভেতরে কলিংবেলের শব্দ আসলে হুরমুর করে উঠে পড়ে সে। রুমের আবছা আলোয় ডাইনিং টেবিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কলিংবেলের শব্দ না, দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে যাচ্ছে এখন।
আস্তে আস্তে উঠে দরজার কাছে যেতেই পীপহোল দিয়ে দরজার ওপাশে দেখার কথা ভাবে সে।
কেউ নেই। সিড়ির এলইডি বাল্বের ফকফকা আলোয় কাউকে দেখা যাচ্ছে না। মনের ভুল হচ্ছে কি!
কিন্তু ফিরে যেতেই আবার কড়া নাড়া হয় দরজায়। আবার পীপহোল দিয়ে তাকানোর আগে এক মুহুর্তের জন্য নিশাতের বুকটা ধ্বক করো ওঠে। নিশাতের মন যে সর্বশক্তিতে নিষেধ করে নিশাতকে দরজার ফুটো দিয়ে তাকাতে।
ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। নিশাত তাকিয়ে দেখে দরজার ওপাশে সেই স্বপ্নে দেখা সুপুরুষ। তার পেছনে বেঁটে করে আরেকটি পুরুষ ও মহিলা, মহিলাটি ছোট একটি বাচ্চার হাত ধরে আছে।্ট
নিশাত মুহুর্তেই সব বুঝে ফেলে৷ সে বুঝে ফেলে যে একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সে। আগের বাসায় ফেলে আসা ভয় তার নতুন ঠিকানায় চলে এসেছে। কিন্তু সে নড়তে পারে না
ঘরের দরজাটি খুলে যায় নিজে নিজে, যেন রাতে লক করা হয় নি। এবং সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে লম্বা এক পুরুষ। যার শরীরে গোলাপজল আর কর্পুরের গন্ধ। মণিহীন চোখ মিশমিশে কালো। লোকটি কামাতুর হাসিমুখে নিশাতের দিকে এগিয়ে আসে, অল্প অল্প করে।
চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে ওঠার পর নিশাত স্বপ্নটির শেষ অংশ মনে করতে পারে না, নয়তো সে পায়জামার শক্ত আঠালো বস্তুকে সাদাস্রাব ঠাহর করতো না, কামরস এবং তার আগমনের পটভূমি টের পেত।
ফজরের নামাজের আগে সে লজ্জাকে জয় করে ফরজ গোসলে ঢুকলো। টাইলস এর তকতকে বাথরুমে বিশাল আয়না। নিশাত কখনো উলঙ্গ হয়ে গোসল করে না, নয়তো, সে নিজের স্তনের ওপর আচরের চিহ্নও দেখতে পেত, যা অশনিসংকেতের মত নিশাতের ফুটফুটে পঁচিশ বছরের ফর্সা দেহে সার্সির মত ফুটে আছে কিনা ।